ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। কেউ অন্য কাজের পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে অতিরিক্ত আয় করেন, কেউ একেই পেশা হিসেবে ব্যবহার করেন এবং অন্য পেশার থেকেও বেশি আয় করেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থাকতে পারে—আয়ের বিভিন্ন পথের মধ্যে কোনটি বেশি গ্রহণযোগ্য, কিংবা লাভজনক?
এককথায় এর উত্তর দেয়া কঠিন। ওয়েব ডিজাইন করলে বহু টাকা আয় করা যায়, কিন্তু সেটা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ডাটা এন্ট্রি বা টাইপিং সে তুলনায় সহজ কাজ। আবার কারও কারও পক্ষে সেটাও সম্ভব হয় না বিভিন্ন কারণে। কারও কাছে নিজস্ব ব্লগ তৈরি করা লাভজনক। ব্লগ জনপ্রিয় হলে সেখানে বিজ্ঞাপন রেখে যথেষ্ট পরিমাণ আয় করা যায়। তবে ইন্টারনেটে আয়ের বিভিন্ন পথগুলোর মধ্যে কিছু হলো—
ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন কাজ
যদি বিশেষ কাজে দক্ষতা অর্জন করে সেই কাজ নিয়ে থাকতে চান তাহলে আয়ের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইনে কাজ করা। ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং—সব ধরনের প্রচুর কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে ইন্টারনেটে। কাজের মজুরি ডলারে, কাজেই স্থানীয় কাজ থেকে তুলনামূলক বেশি। উদাহরণ হিসেবে একটি লোগো ডিজাইন করে পেতে পারেন ১০ থেকে ১০০ ডলার কিংবা আরও বেশি। এক পৃষ্ঠা টাইপ করে পেতে পারেন ২ থেকে ৫ ডলার। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এ রকম কাজ পেতে সহায়তা দেয়। ফ্রিল্যান্সার, স্ক্রিপ্টল্যান্স, গুরু, ওডেস্ক এ ধরনের সাইট। তাদের সদস্য হওয়া যায় বিনামূল্যে। তবে কাজ করলে অর্থ প্রদানের সময় তারা সামান্য ফি কেটে নেয়।
মাইক্রো-জব
মাইক্রো-জবকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। পার্থক্য হচ্ছে, এই কাজগুলো খুব সহজ। সহজ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া। কোনো লিস্টে কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয় সিলেক্ট করা, ছবির সঙ্গে মানানসই নাম দেয়া, কিছু ডাউনলোড করা ইত্যাদি উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারেন।
ব্লগিং
গুগলের বিনামূল্যের ব্লগিং ব্যবস্থা ব্লগার ব্যবহার করে যে কোনো বিষয়ে একটি ব্লগ তৈরি করে যথেষ্ট পরিমাণ আয় করা যেতে পারে। ব্লগে ভিজিটর যত বেশি আয়ের সম্ভাবনা তত বেশি। এজন্য শুরুতে একটি বিষয় বেছে নেয়া প্রয়োজন। ইন্টারনেটে খোঁজ করে ব্লগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। বস্তুত বিষয়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যার যে বিষয়ে আগ্রহ তিনি সেই বিষয়ে ব্লগ তৈরি করতে পারেন। এমনকি ছবি ওঠানোর শখ থাকলে ওঠানো ছবিগুলো রেখেই ব্লগ তৈরি করা যায়। ব্লগ তৈরির পর গুগলের এডসেন্সসহ অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের সদস্য হয়ে ব্লগে বিজ্ঞাপন যোগ করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাফিলিয়েশন নিয়ে তাদের লিংক রাখতে হয়। ভিজিটর যখন সেই বিজ্ঞাপন বা লিংকে ক্লিক করবেন তখন ব্লগার টাকা পান। শুধু ক্লিক করার জন্য টাকা, কিছু কিনলে কমিশন, সদস্য হলে কমিশন ইত্যাদি নানাভাবে আয় আসতে থাকে। ব্লগারের মূল কাজ বেশি ভিজিটর আনার ব্যবস্থা করা।
লেখালেখি করে আয়
ইন্টারনেটে ব্লগ বা ওয়েবসাইট রয়েছে বহু কোটি। তাদের প্রত্যেকের পক্ষে সবকিছু নিজেদের পক্ষে লেখা সম্ভব হয় না। সব সময়ই তারা টাকা দিয়ে লেখা সংগ্রহ করেন। কিছু প্রতিষ্ঠিত সাইট রয়েছে, যারা বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ লেখার সুযোগ করে দেয় এবং রিভিউপ্রতি ২০ থেকে ৪০ ডলার দেয়। কখনও কখনও সেই লেখা থেকে যা আয় হয়, তার ৪০ থেকে ৫০ ভাগ লেখককে দেয়া হয়। এ ধরনের কাজ পাওয়া তুলনামুলক সহজ। প্রায় সব ওয়েববসাইট যেহেতু ইংরেজিতে সেহেতু লিখে আয় করার জন্য ইংরেজিতে দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এটাই মূল যোগ্যতা। এরপর যে বিষয়ে লিখতে হবে, সে বিষয়ে তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন অথবা ইন্টারনেট থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
টেমপ্লেট ডিজাইন
টেমপ্লেট ডিজাইন হলো কোনো ওয়েবসাইট তৈরির প্রাথমিক ধাপ। ধরুন, আপনি ভ্রমণসংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট করতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ছবি ও তথ্য ওয়েবপেজের কোন জায়গায় কতটুকু যাবে, তার একটি প্রাথমিক ডিজাইন এই টেমপ্লেট। তাই আয়ের একটি ভালো পথ হলো টেমপ্লেট ডিজাইন তৈরি। বিভিন্ন টেমপ্লেটের নমুনা দেখতে ভিজিট করুন :
www.freewebsite templates.com, www.joomladesigns.co.uk.
সার্ভে করে আয়
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কারণে জনমত জরিপ করে। বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে এ কাজ অনেক সহজ। ফলে যে কেউ ইচ্ছা করলেই এতে অংশ নিয়ে টাকা আয় করতে পারেন। কাজটি তুলনামূলক সহজ। তারা নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন দিয়ে দেন, সেগুলোর ভিত্তিতে উত্তর সংগ্রহ করতে হয়।
সমস্যা হচ্ছে, সব দেশে সমানভাবে এই কাজ পাওয়া যায় না। অনেকে নির্দিষ্ট করে বলে দিতে পারেন ইউরোপ-আমেরিকার কথা, কিংবা বিপরীতভাবে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয় এমন কথা।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজিং
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজিং বা এসইও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্চ রেজাল্টে কোনো ওয়েবসাইটের অগ্রাধিকার ঠিক করা সম্ভব। যেমন—কোনো কোম্পানির শিক্ষাবিষয়ক একটি সাইট আছে। তারা চাচ্ছে, গুগল সার্চের ফলাফলে তাদের সাইটটি শুরুর দিকে থাকুক। এক্ষেত্রে এসইও জানা থাকলে তা করা সম্ভব। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন : en.wikipedia.org/wiki/search-engine-optimization
গ্রাফিক ডিজাইন
যদি গ্রাফিক ডিজাইন জেনে থাকেন তবে এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনের বিভিন্ন সাইট থেকে কাজ বাগিয়ে নিতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো, প্যাড, বিজনেস কার্ড, লেটার হেড করতে গ্রাফিক ডিজাইনে জ্ঞান প্রয়োজন। গ্রাফিক ডিজাইনসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে দেখতে পারেন :
www.graphicdesign.aboutcom, www.graphic-design.com, www.graphiccompetitions.com
অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার
বর্তমান প্রজন্মের কাছে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট জনপ্রিয় হচ্ছে। ধরি আপনি একটি সাইট করলেন যেখানে ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করা যায়। আপনি যদি সাইটটি আপলোড করেন তাহলে অনেকেই এটি ব্যবহার করবে। আপনি ইচ্ছে করলে এর সঙ্গে গুগল অ্যাডসেন্সের মতো বিজ্ঞাপনি সেবাগুলো যোগ করতে পারেন। বেশি ভিজিট বা বেশি ক্লিক মানেই পকেটে অর্থ। ভালো গেমস অ্যাপ্লিকেশন করতে পারলেই ফেসবুক সেটি কিনে নেবে। ফেসবুকে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করতে ভিজিট করুন www.developers.
facebook.com
নতুন কিছু
ফ্ল্যাশ তৈরি, প্রোডাক্ট রিভিউ, ব্লগ তৈরি, প্রজেক্ট টেস্টার অর্থ উপার্জনের আরও কয়েকটি পথ। তবে টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে নেটে প্রচুর টিউটোরিয়াল রয়েছে যেখানে বেশ কিছু কাজের গোছানো বর্ণনা রয়েছে। এখান থেকে আপনি কাজগুলো শিখে নিতে পারেন।
আপনি যদি নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে আপনি সহজেই বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স করায়।
সহজে আয় কতটা সহজ?
সহজে আয় বলতে মূলত ক্লিক করে আয় বুঝায়। পিটিসি বা পেইড টু ক্লিক হচ্ছে এক ধরনের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। সেখানে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আপনি যেহেতু সেই বিজ্ঞাপন দেখবেন, সেহেতু টাকা পাবেন। প্রতি বিজ্ঞাপনের জন্য ১ বা ২ সেন্ট থেকে শুরু করে .১ সেন্ট পর্যন্ত। তবে অর্থের পরিমাণ একেবারেই কম।
অনেক পিটিসি সাইট ক্লিক করে আয়ের সঙ্গে নানা ধরনের পদ্ধতিতে আয়ের সুযোগ দেয়। যেমন ইমেইল সদস্য হলে আপনার কাছে ইমেইল আসবে, সেগুলো পড়বেন বলে আপনি অর্থ পাবেন (এগুলোও বিজ্ঞাপন)। অন্যদের সদস্য করলে তারা যে আয় করবেন তার অংশ পাওয়া যায়।
এ ধরনের আয় সম্পর্কে কিছুটা সাবধান থাকা ভালো। এভাবে আয়ের পরিমাণ অত্যন্ত কম। কাজ সহজ বলে অনেক কোম্পানি বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে কাজ করায় (যেমন প্রতি ক্লিকে ১ ডলার বা ১০ ডলার), বাস্তবে কোনো বিজ্ঞাপনদাতা এত টাকার বিজ্ঞাপন দেন না। ফল হিসেবে আপনার নামে টাকা জমা হওয়ার পর যখন টাকা চাইবেন তখন সেই কোম্পানি আর যোগাযোগ করবে না।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, অনেক কোম্পানি সদস্য হওয়ার জন্য টাকা দিতে বলে। এভাবে বহুজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। বাংলাদেশেও ডোল্যান্সারসহ সম্প্রতি এ রকম কয়েকটি কোম্পানি কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। কোনো পিটিসি সাইটের সদস্য হওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া ভালো। এই প্রধান পথগুলোর বাইরে ইন্টারনেট থেকে আয়ের আরও অসংখ্য পথ রয়েছে। নিয়মিত কিছুদিন ইন্টারনেটে সার্চ করে তাদের বর্ণনা পড়ে নিজের পছন্দের পদ্ধতি খুঁজে নিতে পারেন।