সিএসই
গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় এবং আরো নানাবিধ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনীয়ারিং ছাত্রদের সাথে আমার যোগাযোগ বেশ ভাল।
তৃতীয় বর্ষ বা তদুর্ধ্ব পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের সাথে কথা বলতে গেলে
বেশিরভাগ সময়ই মনে হয় হতাশার এক কালো চাদর এদের আচ্ছাদিত করে ফেলেছে।
দুধ-কলা দিয়ে সাপ পোষার মতো অনেকেই সেমিস্টার ফি দিয়ে জীবনের দুঃসহ কিছু
মুহুর্ত কিনছে। যে কোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয় নামক কারাগার থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই এরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
কিছু হালকা পাতলা চিন্তা ভাবনা করে আমি যে কারণগুলো পেয়েছি তার মধ্যে
অন্যতম হচ্ছে কিছু শিখতে না পারার হতাশা। এদের বেশিরভাগই বুঝছে যে তারা
কোর্স নিচ্ছে, টেনে হিঁচড়ে বা এপ্লাস নিয়ে পাশও করে ফেলছে কিন্তু কিছুই
শিখতে পারছে না। শিখতে না পারার কারণ? ধরুন আপনাকে ছোটোবেলায় একটা অপশন
দেয়া হলো। আপনি চাইলে আপনার বাবা-মা, পরিবারের কাছ থেকে ভাষা শিখতেও পারেন
আবার নাও পারেন। আপনি ঠিক করলেন আপনার কোনো ভাষা শেখা দরকার নেই। সুতরাং?
আপনি বোবার অভিনয় করে ভিক্ষা করে বড়লোক হয়ে যেতে পারবেন কিন্তু
রবীন্দ্রনাথ-আল মাহমুদ পড়তে পারবেন না। অন্য ইতর শ্রেণীর লোকেরা আপনাকে
সম্মান দিবে টাকা-পয়সার জন্য এবং আপনার ভাষা না শেখার টেকনিকের(!) জন্য
আপনাকে তারিফও করতে পারে কিন্তু আপনার অন্য ভাই-বোনেরা যখন হাতে লেখে
বাবা-মাকে কার্ড দিবে আপনি তখন চেয়ে চেয়ে দেখবেন।
প্রোগ্রামিং
ভাষা হচ্ছে কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাতৃভাষার মতো। আপনি কাজ করবেন কম্পিউটার
নিয়ে অথচ সেই কম্পিউটারের সাথে আপনি নিজে কথা বলতে পারেন না - এটি আপনার
জন্য খুবই অস্বস্তিকর হওয়ার কথা এবং হয়ও তাই। ছাত্রছাত্রীরা দু'তিন
সেমিস্টার পরেই যখন ডাটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম কোর্সগুলো শুরু হয়ে যায়
তখন বিব্রত হয়ে পড়ে। অ্যারে, কিউ পড়বে নাকি সি++, জাভা পড়বে? চিন্তা করতে
করতেই আরেক সেমিস্টার পাড় হয়ে যায়। চলে আসে অ্যাসেম্বলি, গ্রাফিক্স,
অটোমাটা ধরণের খটরমটর সাবজেক্ট। এ পর্যায়ে নাকানি চুবানি খেতে খেতেই আসে
সফটওয়্যার ইঞ্জিনীয়ারিং, রিসার্চ, প্রজেক্ট।
এই নাকানি চুবানি খুব
সহজেই এড়ানো যেতো যদি শুরুতেই প্রোগ্রামিং ভাষাটা শিখে ফেলা যেতো। এর পর
কেবল কোর্সের পড়া কোর্সে। কিন্তু প্রোগ্রামিং শুরুতে লোকজন ভয়ে এড়িয়ে যায় ,
পরবর্তীতে দেখতে থাকে যাই করি তাতেই প্রোগ্রামিং!!! এর ফলে জীবন হয়ে যায়
ড.ইউনুস বা একে খন্দকারের মতো অন্ধকার। পাশ করে বোবা সেজে টাকা কামানো ছাড়া
রাস্তাঘাট পাবেন না আর।
প্রোগ্রামিং পারাটা কম্পিউটার
বিজ্ঞানীদের জন্য বাড়তি যোগ্যতা হওয়ার কথা না, কিন্তু দুর্ভাগ্য(আমাদের মতো
কিছু দুষ্টু লোকের সৌভাগ্য!!!) প্রোগ্রামিংটা এখনো আমাদের দেশে সিএসই
গ্র্যাজুয়েটদের কাছে বাড়তি এক যোগ্যতার মতো।
~যখন দেখি চার বছরের প্রকৌশল কোর্স সম্পন্ন করে কাউকে চাকরি পাওয়ার জন্য আবার ক্র্যাশ কোর্স করতে হয় তখন আসলে খুব অসহায় লাগে।
~ ফালতু পরামর্শঃ প্রয়োজনে এক সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে প্রোগ্রামিং একটি ভাষা
বাসায় বসে শিখে ফেলুন। অথবা কেবল মাত্র একটি প্রোগ্রামিং ভাষার কোর্স এক
সেমিস্টার ধরে করুন। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আপনার এই চার-ছয় মাস সময় বৃথা
যাবে না।
** লিখেছেন - Muhammed Hedayet