নি:সন্দেহ বলা যায়, ফিল্যান্সিং করা কোন সহজ কাজ নয়। ক্লায়েন্ট খোঁজা, সময়মত কাজ সাবমিট করা, কাজ অনুপাতে স্কিল অর্জন, টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা সব মিলিয়ে রাস্তাটি একদম সহজ নয়। বরং বেশ ঝামলোপূর্ণই বলা চলে। একটা বড় বাধা ফ্রিল্যান্সাররা নিজেরাই তৈরি করে। এর উৎপত্তি নিজের সাথে নিজের মিথ্যাচার কিংবা যুক্তিবাদী মন নিজেকে মিথ্যা তথ্য বা ধারণা দেয়া থেকে। বর্তমানে চলমান পরিস্থিতির সাথে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে ফ্রিল্যান্সারদেরকে এই সমস্যাটি থেকেও পরিত্রাণ পেতে হবে। এর সমাধান নিজের কাছেই। সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা না বরং কোন ফ্রিল্যান্সার যদি নানা অজুহাত তৈরি করে, তবে তার জন্য সমাধানের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়গুলো ঠিক এইরকম যেন, একজন ফিল্যান্সার নিজের কাছ থেকে নিজেকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে।
আসুন বিষয়গুলোর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক :
১. মার্কেটপ্লেসের ভাল অবস্থান তৈরি জরুরী নয় : এই ধরনের আন্ত:মিথ্যাচার (নিজের সাথে মিথ্যা বলা) ভবিষ্যতে একজন ফিল্যান্সারের আয়ের ক্ষেত্র কমিয়ে দিবে। একজন ফ্রিল্যন্সারের সব সময় উচিত মার্কেটপ্লেসে ভাল অবস্থান তৈরি করা। যদিও সে মার্কেটপ্রেস বা এর বাইরে থেকে প্রচুর কাজে ব্যস্ত থাকে। তবুও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কাজ সংশ্লিষ্ট কোন ক্লায়েন্ট যদি যোগাযোগ করে; ব্যস্ততার কারণে তার কাজটি করে না দিতে পারলেও, তার সাথে একটি উত্তম রিলেশন বজায় রাখতে হবে।
২. মার্কেটপ্লেস থেকে উচ্চ বেতনে অনলাইন জব’ই উত্তম : অনেক ফ্রিল্যান্সার কিছুদিন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পর ফিক্সড সেলারির অনলাইন জবের দিকে ঢুকে পড়ে। এবং সে এটাকে নিরাপদ মনে করে। কিন্তু সে ভাল করেই জানে এই কাজটি করতে গেলে তাকে মার্কেটপ্লেস থেকে ছিটকে পড়তে হবে। তবুও সে নিজেকে বুঝায় যে, এই জবে বেশি টাকা পাওয়া যাবে বা আর্থিক নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
৩. ক্লায়েটকে বার-বার প্রশ্ন করলে সে বিরক্ত হবে : সফল ফ্রিল্যান্সার মানেই ক্লায়েন্টের সাথে উত্তম যোগাযোগ। অনেক ফিল্যান্সার মনে করে কাজ সম্পর্কে যদি ক্লায়েন্টকে বার বার প্রশ্ন করি তবে ক্লায়েন্ট বিরক্ত হবে। তাই সে ক্লায়েন্টকে কাজ সম্পর্কে বার বার প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকে। অর্ধেক ধারণা নিয়েই সে কাজে নেমে যায়। এতে কাজটি ক্লায়েন্টের চাহিদা মোতাবেক হবে না, এটাই অনিবার্য ! উল্লেখ্য যে, কাজ সম্পর্কে ক্লায়েন্ট বার বার প্রশ্নের উত্তর দিতে কোন দ্বিধা করবে না। কারণ সে কাজটি তার চাহিদা মোতাবেক হওয়ার স্বার্থে অর্থ ও সময় খরচ করতে রাজি।
৪. আমি তো বেশিরভাগ সময় তথ্যভিত্তিক ব্লগ পড়ে কাটাই : অনেক ফিল্যান্সার কাজের সিডিউল ঠিকমতো নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। অনলাইনে বিভিন্নভাবে সময় ব্যয় করে। মনে মনে নিজেকে সান্তনা দেয় যে, আমি তো বেশিরভাগ সময় তথ্যভিত্তিক ব্লগ পড়ে কাটাই। ইনফরমেটিভ বিষয়গুলো নিয়েই সমসময় থাকি। আদতে তার এই সময় কাটানোটা অনেক ক্ষেত্রে অনর্থক ওয়েবসার্ফিং পর্যায়ের।
৫. আমি দক্ষ তাই আপডেটেড হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই : আপনি যতই দক্ষ আর শিক্ষিত হোন না কেন, সময়ে সাথে আপডেট না থাকলে আপনি পিছিয়ে যাবে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম নয়। আপনি যদি আপনার কাজ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নিয়মিত আপডেটগুলোর সাথে পরিচিত না থাকেন, তবে খুব শীঘ্রই আপনি মার্কেটপ্লেস হারাবেন। প্রায়ই দক্ষ ফিল্যান্সারদেরকে তাদের মন এই অহমবোধে আচ্ছন্ন করে।
৬. অন্যের সাফল্যের রাস্তা আমারও কাজে দিবে : এই ব্যাপারটি বেশ ঘটে উঠতি ফিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে। তারা অন্যদের সাফল্যের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হওয়ার পাশাপাশি হুবহু অনুসরণও করতে থাকে। তারা মনে করে ঠিক এভাবে যেতে পারলে আমিও সফল হবো। কিন্ত বাস্তবতা তা নয়। প্রত্যেকটি ফিল্যান্সারকে তার যোগ্যতা, দক্ষতা, পরিস্থিতি, শারীরিক-মানসিক অবস্থা বুঝে নিজস্ব স্বীকয়তায় স্বতন্ত্র গতিপথে চলতে হবে। অনেক সময় নিজের সেই যোগ্যতা নেই, এটা জানা সত্ত্বেও হুবহু অনুসরণ করে। যা অচিরেই ব্যর্থতায় রূপ নেয়।
ফিল্যান্সারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে। তাই এ ধরনের সমস্যা বা নিজস্ব ধারণা থেকে তৈরি ভ্রান্তিগুলো দূর করাও তাদের জন্য খুব একটা কঠিন কাজ নয়। দরকার শুধু সচেতনতা বাড়ানোর।
No comments:
Post a Comment