অনেকেই
আমাকে ম্যাসেজে লিখেন ভাই আমি ফ্রীল্যান্সিং বা আউট সোর্সিং করতে চাই,
আমি বলি আপনার কি কি
স্কিল আছে? তারা বলে ভাই আমার কোন স্কিল নাই। আমি বলি আগে স্কিলড হোন এর পর
এই মার্কেটে আসুন তার আগে না। অবাক করা বিষয় হলো, তারা আমাকে ফের
কোয়েশ্চেন করে ভাই আসলে কি কি বিষয়ে স্কিল অর্জন করা যায় আমাকে বলুন। মানে তারা জানেই না আসলে কোন বিষয়ে স্কিল্ড হতে হবে মানে
তাদের ধারনাই নাই যে কি কি বিষয়ে ফ্রীল্যান্সিং করা যায়। যাক এইটা তাদের দোশ না। তারা হয়তো বর্তমানের উদয়ীমান এই শিল্পর জয় জয়কার দেখে এই
পেশায় আস্তে চাচ্ছে বাট তেমন কোন নলেজ নাই আসলে এইটা কি? অনেকটা আমি যখন ফার্মাসি পড়তে শুরু করেছিলাম তখন জানতাম না আসলে ফার্মাসি সাব্জেক্ট টা
পড়ে কি হবে। স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইফুল ইসলাম পাঠান স্যার ইন্টুডাক্টশন অফ ফার্মাসি বিষয় টা নিতেন তিনি একজন বস মানুশ। সে সেকেন্ট ক্লাসেই ক্লাস নিয়েছিলেন স্কোপ অফ ফার্মাসি। সেখান থেকে জানতে পেরেছিলাম আসলে ফার্মাসি পড়ে আমারা কি
হব কোথায় আমাদের জব। তার সেই ক্লাস টা অনেক ভালো লেগেছিলো। এর পর আমি বুঝতে পারি যে সব সাব্জেক্ট এই স্কোপ অফ সেই সাব্জেক্ট এর একটা
ক্লাস থাকা দরকার। যায় হোক আজকে
ফ্রীল্যান্সিং এর স্কোপ নিয়ে আলোচনা করবো।
আসলে আপনি ফ্রীল্যান্সিং এর কোন সেক্টরে কাজ করলে আপনি বেশি
টাকা ইঙ্কাম করতে পারবেন সেটার থেকে
ইম্পোটেন্ট হল আপনি কোন বিষয় এ কাজ করে মজা পান। কোন বিষয় কাজ আপনার ভালো
লাগে। কোন বিশয়ের কাজ আপনি
উপভোগ করেন। আমি আগের পোস্ট এ লিখেছিলাম যে আমি স্কাইপে এক আমেরিকান কে ক্যাল্কুলাস
শিখিয়ে ৫০০ডালার করে ইঙ্কাম করেছিলাম। মানে ফ্রীল্যাসিং টিউশনি। আপনি এমন অনেক বিষয় পাবেন যেখানে ক্লাইন্ট এর সাথে জাস্ট চ্যাট করবেন। ভয়েস বা টেস্ক চ্যাট। আমেরিকা , ইউরোপে অনেকেই আছে একা
মানুশ আর সেখানে কেউ তাকে টাইম দিয়ে তার সাথে সুখ দুঃখের কথা বলবে সেইরকম মানুশ নাই। কারন টাইম ইম্পোটেন্ট তাই তারা টাকা দিয়ে কারো সাথে চ্যাট করতে চায়। এইরকম কাজো দেখেছি অনেক। এইতো গত ৩ সপ্তাহ আগে দেখলাম একজন এইরকম কাজ পোস্ট অরেছে। এক ফিলিপাইনের মেয়ে বিড করে কাজ টা জিতে নিল আর। যাক এই টাইপের কাজ খুব কম থাকে। সচারচর যেই টাইপের কাজ থাকে সেগুলা আমি দিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের যেটা ভালো লাগে সেই দিকে মনযোগ দিতে পারেন। আর সেই দিকে স্কিল্ড হতে পারেন।
আমার এই লেখাটা আপনার
যদি ভালো না লাগে তাহলে আপনি নিজেই পরখ করে নিতে পারেন আপনার
পেশা টা। বিভিন্ন ফ্রীল্যান্সিং সাইট যেমন ওডেস্ক, ফ্রীল্যান্সার , ইল্যান্স, গুরু, পিপল পার আওয়ার সাইট গুলাতে কাজের ক্যাটাগোরি গুলা দেখতে পারেন আর
সেখানে যে কোন জব পোস্ট দেখতে পারেন। ক্লাইন্ট কি চাচ্ছে আর যারা বিড করতেছে তাদের প্রফাইল একটু দেখে নিতে পারেন তারা কি কি বিষয়ে স্কিল্ড। এই ভাবেই আপনি পেয়ে যেতে পারেন আপনি আসলে কি কি কাজ পছন্দ করেন। আর কি কি কাজ আপনার জন্য ফিট। এর পরেও আমি নিজে কিছু
ক্যাটাগোরি দিয়ে দিচ্ছি,
আপনি ফ্রীল্যান্সিং এ
নিজেই কিছু করতে পারেন বা ক্লাইন্ট এর কাজ করতে পারেন। যেমন,
অ্যাড সেন্স , অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, অথবা নিজের কোন
প্রডাক্ট যেমন টেমপ্লেট বানিয়ে বিক্রি এইগুলো করতে পারেন। এইটাতে আপনার কোন ডেড লাইন থাকে না বা আপনাকে বিড করতে হবে না। আপনি স্বাধীন ব্যাবসায়ীর মত কাজ করে মাসে অনেক টাকা ইঙ্কাম করতে পারেন। আমি এক ছেলেকে চিনি যে কুত্তার খাবার বিক্রির এক সাইটের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটীং করে মাসে প্রায় ৫ হাজার
ডলার ইঙ্কাম করতেছে। অথাচ সে ইতিহাসের স্টুডেন্ট তাও আবার ন্যাশন্যাল
ভার্সিটির। মানে সে পাশ করে বের হলে তার ৮ হাজার টাকার একটা জবে
অ্যাপ্লাই করলে তার সিভিই অনেক সময় কেউ দেখবে না। বাট সে এখুনি ৫ হাজার ডলার মানে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ইঙ্কাম করতেছে। এছাড়া আপনি যদি বিড করে সরা সরি ক্লাইন্টের কাজ করতে চান তাহলে তো ফ্রীল্যান্সিন সাইট গুলো তো আছেই। এবার চলুন দেখে আসি কি কি বিষয়ে আপনি কাজ করতে পারেন।
ওয়েব ডিজাইন , আইটি এবং সফটওয়্যার ঃ ফ্রীল্যান্সিং এ এইটাই সব চাইতে বড় ক্যাটাগরি। এইখানে আপনি ওয়েব ডিজাইন রিলেটেড সব কাজ পাবেন। এছাড়া আইটি বা সফটওয়্যার ডেভ্লপমেন্ট এর সব কিছু পাবেন। আর ডিজাইন এর জন্য ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, শিখে নিতে পারেন। এছাড়া HTML+CSS=JS
শিখে নিতে পারেন ইউ আই ডিজাইন এর জন্য। এছাড়া প্রগ্রামিং এর জন্য বরতমানে সবচাইতে জনপ্রিয়ো হল PHP+MySQL এইটা ভালো মত শিখে নিতে পারেন। তবে জেন্ড পরিক্ষা দিয়ে দিলে তো কথায় নাই। এছাড়া অনেকে আমাকে বলে ভাই ওয়ার্ডপ্রেশ এর অনেক কাজ শুনেছি এইটা শিখতে হলে কি করতে
হবে। আসলে ওয়ার্ডপ্রেস হল html+css+js+php+mysql এর
সমন্বয়ে একটা সি এম এস। সো এইটার থিম বা প্লাগিন ডেভ্লপমেন্ট করতে হলে আপনাকে এই সব গুলাই
মোটামোটি জানতে হবে। এছাড়া আপনি ASP.NET,
MSSQL শিখতে পারেন। এছাড়া অ্যান্ড্রোয়েড ডেভলপমেন্ট এর জন্য শিখতে পারেন জাভা ও অ্যান্ড্রোয়েড আর
আই ফোন ডেভলপমেন্টের জন্য শিখতে পারেন অব্জেক্টটিভ সি। এছাড়া ইউন্ডোজ ফোন বা ইউন্ডোজ প্লটফরম এর ডেভলপ মেন্ট এর জন্য শিখতে পারেন সি
সার্প।
মোবাইল অ্যাপঃ এক্টূ
আগে লিখেছি মোবাইল অ্যাপ গুলোর জন্য কি কি শিখতে পারেন। আসলে এখন মোবাইল মার্কেটে অ্যান্ড্রোয়েড এর রাজত্ত বেশ
এছাড়া আইফোন , ইউন্ডোজ ফোন, ব্ল্যাকবেরি ফোন এর
অ্যাপ ডেভ্লপ মেন্ট করতে পারেন।
রাইটিংঃ আমি মনে করি
আপনার লেখা লেখির ঝোক একটু বেশি থাকলে এইটা বেছে নিতে পারেন। প্রচুর টাকা ইঙ্কাম করতে পারবেন। আমি দেখেছি ১০০ ওয়ার্ড এর একটা আর্টিকেল দেড় ডলারে বিক্রি করা হয়। আর আমি জামান ভাই নামের এক এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বি বি এ পড়া এক ভাই কে চিনি যে ডেইলি ৫০
টা আর্টিকেল লিখতো। আর তার মাথায় অটোমেটিক
লেখা চলে আস্তো। আপনি রাইটিং একবার
শুরু করলে এক মাস পরে দেখবেন যে লেখার
মত কিছুই নাই। প্রথম মাস একটু কস্ট
হয়ে এর পরে অটোমেটিক কি বোর্ড চলে। যায় হোক এই লাইনে প্রচুর কাজ আছে।
এর পর ডিজাইন, মিডিয়া , আক্রিটেকচারঃ আমার ক্লাইন্ট দের কাছে শুনি তারা নাকি ডিজাইন খুজে পায় না। ডিজাইনার এর প্রচুর অভাব। আসলেই তাই। ভালো ডিজাইনার এর প্রচুর অভাব। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের চারুকলা থেকে বের হয়ে অনেকেই
টাকার অভাবে পড়ে তারা যদি ফ্রীল্যান্সিং করতো আমি সিউর তারা
মাসে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ইঙ্কাম করতে
পারতো। যায় হোক আপনার কালার
সেন্স যদি ভালো থাকে তাহলে আপনি ডিজাইন এ চলে
আসুন। এছাড়া ভিডিও এডিটীং , আক্রিটেকচার ডিজাইন ইত্যাদিতে প্রচুর কাজ আছে। মেইনলি লোগো ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ফটো রিটাচিং, ওয়েব টেমপ্লেট ডিজাইন মাঝে মাঝে প্রডাক্ট ডিজাইন , ফ্লাইয়ার ডিজাইন, টিশার্ট ডিজাইন, প্যড ডিজাইন এর কাজ
থাকে। একবার ফ্রীল্যান্সিং সাইট গুলাতে ঘুরে আসুন পেয়ে যাবেন। আপনার কাংখিত কাজ।
ডাটা এন্ট্রিঃ ডাটা এন্ট্রি তে মোটামোটি কাজ আছে। আগে বাংলাদেশে ডাটা এন্ট্রি মানেই ক্যাপচা ফিলআপ বুঝাতো এখন এই কন্সেপ্ট চেঞ্জ। এখন ডাটা এন্টির অনেক প্রকার ভেদ আছে যেমন ইকমার্স সাইটে প্রডাক্ট এন্ট্রি
ইত্যাদি।
ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড
সায়েন্সঃ এই ক্যাটাগরিতে তে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সায়েন্স এর বিভিন্ন কাজ থাকে। যেমন হোম ডিজাইন, ডিজিটাল ডিজাইন, ডাটা মাইনিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এইখানে কাজ মোটামোটি।
প্রডাক্ট সোর্সিং আন্ড ম্যানুফ্যাকচারিংঃ এইখানে বিভিন্ন বায়ার তার
প্রডাক্ট এর ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারার খুজে
অথাবা সাপ্লাইয়ার খুজে। অনেক আগে এক বায়ার আমাকে বাংলাদেশের বাশের তৈরি হস্ত
শিল্পের প্রডাক্ট চেয়েছিলো। বাট আমার পরিচিত ছিলোনা তাই দিতে পারি নাই।
সেলস এন্ড মার্কেটীংঃ
এই সেক্টর বিশাল। মেইনলি অনলাইন শোপ
গুলার প্রডাক্ট সেলস এন্ড মার্কেটিং করতে হয়। এছাড়া এস ই ও, এস এম এম, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং , ইবেই মার্কেটীং এর জন্য লোক হায়ার করে।
বিজনেস, অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স এন্ড
লিগালঃ এইটাও বিশাল এক ক্ষেত্র। অনেকেই অ্যাকাউন্টিং এর হিসাব নিকাশ এর জন্য
ফ্রীল্যান্সার খুজে । এখানে প্রচুর কাজ আছে।
ট্রান্সসিলেশন ও
ল্যাংগুয়েজঃ আমি নিজেই প্রায় ৪ থেকে ৫ টা ভাষায় কথা
বলতে পারি। জার্মান, ইংরেজী, হিন্দি, বাংলা, অল্প রাশিয়ান আর এখন চাইনিজ এ ভর্তি হইছি । স্পানিশ আর ফ্রঞ্চ শিখার ইচ্ছা আছে । যায় হোক ট্রান্সসিলেশনে প্রচুর কাজ। শেশ করতে পারবেন না। যদি শখের বশত কোন ভাষা ভালো মত শিখে থাকেন তাহলে এই কাজ করতে পারবেন। আমি এই কাজ করতে পারি না কারন আমি শুধু কথা পারি লিখতে গেলে কলম ভেঙ্গে যায়। তাই করি না।
অন্যান্যঃ আসলে
অন্যান্য অনেক ক্যাটাগরি আছে। যেমন ক্লাইণ্টের সাথে শুধু চ্যাট করবেন, ক্লাইণ্ট এর পড়ালেখায়
হেল্প করবেন, থিসিস পেপার রেডি করে দিবেন, ল্যাব মেনুয়াল রেডি
করে দিবেন। ক্লাস অ্যাাসাইমেন্ট
রেডি করে দিবেন ইভেন রান্নার রেসিপি দিবেন।
এই হল মোটা মোটি
ফ্রীল্যান্সিং এর ক্যাটাগোরি। সো আপনার কোনটা পছন্দ সেইটা ঠিক করে শুরু করে দিন পড়া
লেখা আর স্কিল অর্জন। এর পর নেমে পরুন ডলার ইঙ্কামে তাও আবার আপনার ঘরে বসে
থেকে। কোন হরতাল, ধরমঘাট, রাস্তা ভাংগা, রাস্তায় পানি জমে আছে , রিস্কা পাচ্ছেন না, বাস ভাড়া বাড়লো বা
কমলো সেটাতে আপনার মাথা নস্ট হবে না। শুরু নস্ট হবে যখন ডলারের রেইট ৮৪
টাকা থেকে যখন ৭৭ টাকায় নেমে আসে। আমার যা হয়েছে। যখন ডলার ৮৪ টাকা করে ছিলো
আমার বাড়ি ভাড়া যা ছিলো এখন ৭৭ টাকা করে আমার বাড়ি ভাড়া ২ হাজার টাকা বেশি। এক দিক দিয়ে ডলারে টাকা কম পায় অন্য দিক দিয়ে বাড়ি ভাড়া বেশি। যাক এক্টূ মজা করলাম।
আপনাদের ফ্রীল্যান্সিং
জীবন ভালো কাটুক এই কামনায়। বিদায়। আমার জন্য দোয়া করবেন ।